বাগেরহাটে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরি করতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। মাটির উপর রং দিয়ে প্রতিমাগুলোকে নিপুণভাবে সাজাতে ব্যস্ত তারা।
এ বছর বাগেরহাটের নয়টি উপজেলার ছয়শ’ ১৫টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবারও ব্যক্তি উদ্যোগে বাগেরহাটের হাকিমপুরের শিকদার বাড়িতে বৃহত্তম পূজামণ্ডপে সাতশ ১টি প্রতিমার শৈল্পিক রূপ দেয়ার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন কারু ও প্রতিমাশিল্পীরা। তবে আয়োজক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতাদের দাবি এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রতিমার মন্দির।
এছাড়া জেলার বেশ কয়েকটি মন্দিরে শতাধিক প্রতিমার মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সর্বজনীন পূজা মন্দির, চুলকাঠি বাজারের বণিকপাড়া সর্বজনীন পূজা মন্দির, পোলঘাট সর্বজনীন পূজা মন্দির এবং ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের বেতাগা মোমতলা সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলোতে বেশিসংখ্যক প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে।
দিনদিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছরের আগের বছর ছিল ছয়শ ১টি প্রতিমা। গত বছর ছিল ছয়শ ৫১টি। আর এবার এই মণ্ডপে সাতশ ১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ বলে দাবি করেন পূজার আয়োজক ডা. দুলাল শিকদার ও তার ব্যবসায়ী ছেলে লিটন শিকদার এবং বাগেরহাট পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়।
প্রতিমাশিল্পী বিজয়কৃষ্ণ বাছাড় বলেন, এখানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চার যুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এ বছর বৈশাখ মাসের আট তারিখ থেকে ১৬ জন কারিগর তাদের নিপূণ হাতে প্রতিমা তৈরির কাজ করে চলেছেন। শেষ সময়ে রংতুলির কাজ পুরোদমে চলছে। এ বছর এখানে বিশেষ আকর্ষণ থাকছে পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উঁচু ভাসমান মন্দির। যেখানে সবার উপরে থাকবে শিব ঠাকুর। এরপর রামকৃষ্ণ পরমংসদেব ও সারদা দেবী। আরও থাকবেন স্বামী বিবেকানন্দ। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই মণ্ডপের প্রতিমা দেখতে এসেছেন বলে তিনি জানান।
পার্শ্ববর্তী সুগন্ধি গ্রামের আরিফ ঢালী জানান, শিকদারবাড়ির দুর্গাপূজা মানে একটা অন্যরকম উৎসবের আমেজ। আমরা হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ ভুলে এই কদিন সবাই মিলে তাদের সহযোগিতা করি। এত বেশি সংখ্যক প্রতিমা দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করার কারণে হাকিমপুরের পরিচিতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা এলকাবাসীর জন্য একটি গৌরবের বিষয়।
খুলনার ডুমুরিয়া থেকে এই মন্দিরে প্রতিমা দেখতে আসা মানিক কুমার দাস জানান, হাকিমপুরের শিকদারবাড়ির মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ দেখে তিনি খুবই আনন্দ উপভোগ করেছেন। এতোগুলো প্রতিমা একসঙ্গে একই মন্দিরে এমনটা কল্পনাও করা যায় না।
আয়োজক লিটন শিকদার বিদেশ থেকে মোবাইলে জানান, ২০১০ সাল থেকে আমি দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছি। প্রথম বছরে ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের উৎসাহে দিনদিন প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর হাকিমপুর গ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা দুর্গাপূজা দেখতে আসে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় জানান, দুর্গোৎসবে উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি ভালোভাবে চলছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছর আড়ম্বরপূর্ণ হবে আমাদের এ অনুষ্ঠান। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই এ উৎসবে বাগেরহাটের সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে আনন্দ করবে। প্রতিমার সংখ্যার দিক থেকে হাকিমপুরের শিকদার বাড়ির প্রতিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা মণ্ডপ।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ছয়শ ১৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলার শিকদারবাড়িতে দেশের বৃহত্তম দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনেক ভিআইপি এসে থাকেন। তাই এই মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আলাদাভাবে করা হয়।