Saturday, December 29, 2018

ভোট উৎসবে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা


রংপুর বিভাগের ৪ জেলার বিলুপ্ত ১১১ ছিটমহলের সাড়ে ৩৭ হাজার বাসিন্দা ভোট উৎসবে মেতেছে। এই ছিটমহলের প্রায় ২১ হাজার ভোটার প্রথমবার ভোটাধিকার প্রযোগ করে সরকার গঠনে অংশীদার হবেন। এই খুশিতে তারা আত্মহারা।

রোববার সকাল থেকে তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য বানাবেন। সাবেক ছিটমহলের সর্বত্রই উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে বিলুপ্ত ছিটমহল ‘ওপেন চৌকির’ বাসিন্দা নিলুফা বেগম, জামিল হক, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম, জোলেখা ও তার স্বামী অমিনুলসহ অনেকে জানালেন, তারা তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট উৎসবের জন্য অপেক্ষা করছেন। সেই কাঙ্ক্ষিত সময় শুরু হবে রাত পোহালেই।

ওই এলাকার জিয়ারুল জানান, তারা আগে ভারতের অধীনে ছিলেন। বাংলাদেশি হিসেবে ভোট দিতে পারবেন- এটা ভাবতেও পারেননি। এক সময় তারা ভারত কিংবা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন না। কোনো দেশই তাদের মেনে নিতে পারেনি। ভোটাধিকার পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন।

কুড়িগ্রামের সাবেক দাশিয়াছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা দাশিয়াছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হায়দার আলী, মোজাফর হোসেন, কলেজ ছাত্র নুর জামাল, সমন্বয় পাড়ার গৃহিণী নূর নাহারসহ অনেকে জানালেন, বর্তমান সরকারের কাছে তারা ঋণী। কারণ এই সরকার তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। তারা ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে ১৯ হাজার ২৫ জন, লালমনিরহাটে ১০ হাজার ১৮ জন, কুড়িগ্রামে ৭ হাজার ৭৪৭ জন এবং নীলফামারীতে ৫৪৪ জন নতুন বাংলাদেশি রয়েছে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছে। এ সব নতুন নাগরিকদের ৬০ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে। সেই হিসেবে ২০ হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নতুন বাংলাদেশি আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, নীলফামারীতে ৪টি এবং পঞ্চগড়ে ৩৬টি ছিটমহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়েছে। এ সব ছিট মহলের ভূখণ্ড এখন বাংলাদেশের এবং এখানকার বাসিন্দরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি ছিটমহলে ভোট উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

রংপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন জানান, সাবেক ছিট মহলগুলো এখন বাংলাদেশের অংশ। তাই ছিটমহলের জন্য আলাদা কোনো ভোটার তালিকা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সাবেক ছিটমহলে প্রায় ২০ হাজারের মতো ভোটার হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ওই সব এলাকায় নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আশা করেন, আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Related Posts: